স্বদেশ ডেস্ক:
মৃত্যুর ২০ বছর পর মামলা থেকে নিষ্পত্তি পেলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় বাজুবাঘা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ও থানা বিএনপি সভাপতি আবদুস সোবহান।
বৃহস্পতিবার মামলার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলা নিষ্পত্তির রায় দেন। তার ৫ বছরের সাজা বাতিল এবং জরিমানাও মওকুফ হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া মিতি জানান, যেহেতু আপিল মঞ্জুর হয়েছে, সেহেতু ওই চেয়ারম্যানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাতিল এবং জরিমানা মওকুফ হয়ে গেছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, রাজশাহীর অবিভক্ত তৎকালীন চারঘাট উপজেলার ও বর্তমান বাঘা উপজেলার ১ নম্বর বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে তিনটি হাট-বাজার লিজ দেওয়া সাড়ে ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ১৯৮২ সালের ৯ জুন চারঘাট থানায় মামলা করেন তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
ওই বছরের ১০ নভেম্বর এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। বিচার শেষে ১৯৮৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আদালত তার ৫ বছরের জেল ও ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান। এই আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় ২০০১ সালের ১৬ জুন আবদুস সোবহান মারা যান। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া মিতি। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলার চাকিপাড়া গ্রামের মরহুম সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সোবহানের বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর ২০ বছর পরেও যে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, এ সংবাদ জানার পর ভালো লাগা ছাড়া আর কী বলার আছে। তবে এই মামলার বিষয়ে আমার জানা ছিল না।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের জুন মাসে আমার বাবা মারা যান। যখন মামলা হয় তখন আমি ছোট ছিলাম। ১৯৮৩ সালে বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার বাবা অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মা ফাতেমা খাতুন মারা যান। বাবার আমলে রেখে যাওয়া মাটির ঘরে দুই ভাই বসবাস করছি। বর্তমানে দুই ভাই ও দুই বোন বেঁচে আছি।
এ বিষয়ে বাজুবাঘা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন জানান, অবিভক্ত চারঘাট থানা থাকাকালীন সময়ে মরহুম আবদুস সোবহানের নামে ১৯৮২ সালে একটি মামলা হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে তিনি পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে এই মামলার কারণে সাসপেন্ড হয়েছিলেন। পরে তিনি আর নির্বাচন করেননি।
আব্দুস সোবহান একজন সহজ সরল মানুষ ছিলেন। অবিভক্ত চারঘাট থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন আবদুস সোবহান।
আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী শাহীদ আহমেদ জানান, হাইকোর্ট বিভাগ অনেক পুরানো একটি আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন। এ মামলার আপিলকারী ২০ বছরের বেশি সময় আগে মারা গেছেন। আপিলকারী মারা গেলে আইনের বিধান হচ্ছে আপিলটা অ্যাবেট (বাদ) হয়ে যাবে দণ্ড ও সাজার ক্ষেত্রে। কিন্তু জরিমানাটা থেকে যাবে। এখন এই জরিমানার বিষয়ে শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করেছেন। এর মাধ্যমে আপিলের নিষ্পত্তি ঘটলো।